ক্যাকটাস মিডিয়া তৈরি বা ক্যাকটাসের মাটি তৈরির নিয়ম
বাসাবাড়িতে সৌন্দর্য বর্ধনসহ অফিস রুমে ইনডোর গাছের পাশাপাশি বর্তমান সময়ে ক্যাকটাসও সাকুলেন্ট জাতীয় উদ্ভিদ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ক্যাকটাস ও সাকুলেন্ট মূলতঃ মরুভূমির গাছ হওয়ায় এর যত্ন নেওয়ার ধরন এবং এতে ব্যবহার্য মিডিয়া বা মাটি তৈরির নিয়মও আলাদা। পানি ধরে রাখে না এমন উপাদান বা উপকরণ দিয়ে ক্যাকটাস মিডিয়া তৈরি করতে হয়। ক্যকটাস যেহেতু স্বল্প মূল বা শেকড় জাতীয় উদ্ভিদ তাই ক্যাকটাসের মাটি তৈরির পদ্ধতি বা নিয়ম হলো এতে সঠিক পরিমাণে জৈবশক্তি বা উপাদানের নিশ্চিত করা।
ক্যাকটাস মিডিয়া বা ক্যাকটাস সয়েল মিক্স কি?
বসত-বাড়ি বা অফিস রুমের সৌন্দর্যের জন্য আমরা ক্যাকটাস জাতীয় গাছকে টব বা পটে বেড়ে উঠার জন্য যে মাটি বা উপকরণ ব্যবহার করে থাকি তাকে ক্যাকটাস মিডিয়া বা ক্যাকটাসের উপযোগী মাটি বলা হয়ে থাকে। মরুভূমির এই উদ্ভিদটির শেকড় খুবই নরম হওয়ায় এর মিডিয়া বা মিক্সিং হতে হবে খুবই হালকা ও প্রয়োজনীয় পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং বাতাস চলাচলের উপযোগী যা গাছের বৃদ্ধিকে করবে তরান্বিত। সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ব্যবহার্য টবে ইনডোর ও আউটডোর গাছের মাটি আর সাকুলেন্ট ও ক্যাকটাস জাতীয় মিডিয়ায় কিছু পার্থক্য আছে। যেখানে পটের মাটিতে জলীয় অংশ বা ময়েশ্চারাইজিং নিশ্চিত করা হয় কিন্তু ক্যাকটাস মিডিয়ার জন্য তা কম প্রয়োজন।
ক্যাকটাস মিডিয়া বা ক্যাকটাসের মাটি নিজে তৈরি করার উপকারিতা
ক্যাকটাস ও সাকুলেন্ট জাতীয় উদ্ভিদগুলো খুবই নাজুক প্রকৃতির। এই গাছগুলোর মাটি পানি নিষ্কাশনের জন্য নুড়ি পাথর, কয়লা ও বালি মিশ্রনের পাশাপাশি গাছের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এমন উপাদানগুলো নিশ্চিত করতে হওয়ার প্রেক্ষিতে ক্যাকটাসের মাটি নিজে তৈরি করা উত্তম। এছাড়া যেখানে সাধারণ গাছের পটিং মিক্সারের তুলনায় ক্যাকটাস মিক্সিং তুলনামূলক দামী তাই নিজে তৈরি করা হলে খরচ কম হবে।
যদিও এসব উপকরণ খুব সহজে পাওয়া যায় না এবং সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য তাই অনেকেই এড়িয়ে চলেন এবং বাজারে পাওয়া ক্যাকটাস সয়েল ব্যবহারে সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তাদের জন্য আমাদের সুপারিশ কম দামে সহজলভ্য ও নিম্নমানের মিক্সিং ব্যবহার না করে ফ্রেশি’র ক্যাকটাস মিডিয়া বা ফ্রেশি’র ক্যাকটাসের মাটি ব্যবহার করার জন্য। যেখানে ক্যকটাসের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের সাথে মিক্সিং-এ রাখা হয়েছে পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য কয়লা ও নুড়িপাথর।
ক্যাকটাস মিডিয়া বা ক্যাকটাসের মাটি তৈরির উপকরণ
মূলত তিনটি মূল উপকরণ বা উপাদানের সমন্বয়ে তৈরি করা হয় ক্যাকটাস পটিং মিক্সার বা ক্যাকটাসের মাটি।
১। রেডি মিক্স সয়েল বা পটিং সয়েল বা মাটি;
২। মোটা বালি এবং
৩। পার্লাইট ও পিউমিস বা ঝামাপাথর।
এগুলোর মধ্যে রেডিমেড বা রেডি মিক সয়েল তৈরির পদ্ধতি একেবারে গুরুত্বপূর্ণ ও অনেকটা ঝামেলাপূর্ণ। এটির উপর নির্ভর করে মাটির ময়েশ্চারাইজিং ও পানি নিষ্কাশনের বিষয়টি। এটা একেকজন একেকভাবে করে থাকলেও এর সাথে কোকো পিট বা কোকো ডাস্ট, জৈব উপাদান এবং ছত্রাক নাশক ব্যবহার করতে হবে। পাটিং সয়েলের সাথে কাঠ কয়লা গুড়ো মেশাতে হবে।
মোটা বালি বা সিলেকশন গ্রেড বালি।
পার্লাইট ও পিউমিস এর সমন্বয়ে একটা আলাদা মিক্সিং তৈরি করতে হয়।
এই উপকরণগুলো সমপরিমাণ নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে দিলেই হয়ে যাবে ক্যাকটাস মিডিয়া যা এয়ার টাইট কোনো পটে সংরক্ষণ করে সারা বছর ব্যবহার করা যাবে।
তবে, এখানে গোপন কিছু রেসিপি রয়েছে যা সকল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সহজে প্রকাশ করে না। আমাদের দীর্ঘদিনের কিছু গোপন ক্যাকটাস মিডিয়া’র একটি গোপন আজকের এই পোস্টে সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হলো। সেটা হলো পাইন গাছের বাকল গুড়ো।
পাইন গাছের বাকল গুড়ো
প্রতিটি ছোট টবের জন্য একটি ১০০ গ্রাম ওজনের এক টুকরো পাইন গাছের বাকল গুড়ো করে সম্পূর্ণ মিক্সিং এর সাথে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এটি মিক্সিং-এ ফাঁকা অংশ তৈরি করে যার ফলে গাছের শেকড় প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন পায়। এছাড়া এটি মাটির ময়েশ্চারাইজিং নিশ্চিত করাসহ পানি দ্রুত নিষ্কাশনের কাজ করে।
এক্ষেত্রে অনেকেই ক্যাকটাসের মাটি তৈরির সময় পাইন গাছের বাকলের পরিবর্তে কোকো পিট বা ধানের তুস ব্যবহার করে আসছে।
ক্যাকটাস গাছের যত্ন
সয়েল মিক্স বা মাটি তৈরির সময় হাড়ের গুড়ো, ডিমের খোসার গুড়ো ও সার পরিমাণমত মিশিয়ে দিতে হবে।
গাছ রিপটিং বা নার্সারি হতে কেনার পর পটে লাগানোর দশ থেকে পনের দিন আগেই মাটি তৈরি করতে হবে।
পট নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই দ্রুত পানি নিষ্কাশনের বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।
গ্রাফটিং করার ক্ষেত্রে গাছটিকে রোদ এড়িয়ে ছায়ায় এবং আলোর মধ্যে রাখতে হবে। সম্ভব হলে একটি স্বচ্ছ পলি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে যাতে মাতৃ গাছের রস তাড়াতাড়ি শুকিয়ে না যায়।
গ্রাফটিং ও রি-পটিং করা গাছের শেকড় গজিয়ে উঠেছে কিনা নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে সার প্রয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে১৫ দিন পর পর জলীয় সার বা তরল হিসেবে গাছ ও মাটিতে স্প্রে করে প্রয়োগ করা উত্তম।
ক্যাকটাস গাছ লাগানোর নিয়ম
ক্যাকটাস বীজ, কান্ড ও গ্রাফটিং এর মাধ্যমে নতুন গাছ বা চারা তৈরি করা যায়। বীজ সাধারণত নিয়ম মেনে বীজতলায় বপন করতে হয়। তবে, বেশিরভাগ ক্যাকটাসেই কান্ড হতে নতুন গাছ বা চারা উৎপাদন করা সম্ভব। কিছু কিছু রয়েছে যেগুলোর গ্রাফটিং করা যায় এবং এগুলোর সৌন্দর্য অনেক বাড়ে। এর মধ্যে মুন ক্যাকটাস অন্যতম। মুন ক্যাকটাস রঙ্গিন হওয়ায় সবুজের সাথে এর চমৎকার একটা কম্বিনেশন হয়। মুন ক্যাকটাস সাধারণত হলুদ, লাল, গোলাপি ও মেরুন রঙের হয়ে থাকে।
মুন ক্যাকটাস গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে অন্য একটি ক্যাকটাসের কান্ডে প্রতিস্থাপন করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে নার্সারিগুলোতে যেসকল মুন ক্যাকটাস পাওয়া যায় সেগুলোকে ড্রাগন ফলের কান্ডে প্রতিস্থাপন করা হয়ে থাকে।
মুন ক্যাকটাস ড্রাগন কান্ডে গ্রাফটিং করার জন্য প্রথমে একটি ড্রাগন কান্ডকে কেটে নিতে হবে। তারপর, গ্রাফটিংয়ের জন্য সংগ্রহ করা মুন ক্যাকটাসের কান্ডটিকেও কেটে সমান করে নিতে হবে। এবার ড্রাগন কান্ডের ঠিক মাঝখানে ক্যাকটাসটিকে বসিয়ে গ্রাফটিং টেপ দিয়ে মুড়িয়ে নিতে হবে।
এই অবস্থায় এক সপ্তাহ ছায়া পড়ে আলোকিত স্থানে একটি স্বচ্ছ পলি দিয়ে কান্ডটিকে ঢেকে রাখতে হবে। দুটি কান্ড জোড়া লেগে গেলে তা বিক্রি কিংবা টবে লাগানোর জন্য উপযুক্ত হবে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.