গরমে গাছের যত্ন
শহরে একটুকরো জমি সবার নেই কিন্তু একখন্ড ভালোবাসা নামের একটুখানি শখের বাগান কিন্তু প্রায়ই প্রতিটি বাসায়তেই রয়েছে। তা ছাদে হোক কিংবা বারান্দায়। ছাদ বাগানে কিংবা বারান্দায় ফুল গাছের পাশাপাশি শাকসবজিসহ ফলজ গাছও রয়েছে। কেউ কেউ তা আবার বানিজ্যিকভাবে শুরু করেছে এবং আশানুরূপ সফলতাও পাচ্ছে। কিন্তু বিপত্তি ঘটে শীতে যখন আবহাওয়া হয়ে যায় একদম রুক্ষ, বর্ষায় যখন অতিবৃষ্টির ফলে মাটিতে পানির পরিমাণ বেশি হয় কিংবা গ্রীষ্মে যখন আবহাওয়া খুবই গরম এবং অনাবৃষ্টির ফলে মাটি ও টব অতিরিক্ত গরম হয়ে উঠে। ছাদ কিংবা বারান্দা বাগানের পাশাপাশি গ্রীষ্মকালীন ফুল ও সবজি চাষ হয়ে থাকে। তাই আমাদের জানা উচিত গরমে গাছের যত্ন কিভাবে নিতে হবে। কারন গরমে রুক্ষ হয়ে পড়া মাটি হতে প্রয়োজনীয় পানি ও পুষ্টি যোগানো সম্ভব হয় না। এজন্য প্রয়োজন বাড়তি যত্ন ও পরিচর্যার।
গরমে গাছের যত্ন
🌻 যেহেতু গ্রীষ্মকাল, বৃষ্টির তেমন কোনো সম্ভাবণা থাকে না এবং গরম পড়ে তাই অন্যান্য সময়ের চেয়ে মাটিতে পানির অংশ কমে যায়। এতে গাছের পাতাগুলো নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে পেকে কিংবা শুকিয়ে যেতে শুরু করে। গাছের পাতাগুলো মূলত প্রয়োজনীয় পুষ্টি না পাওয়ায় এমনটা ঘটে। এই সময় গাছগুলো পাতার অসময়ে পেকে যাওয়া বা শুকিয়ে যাওয়া রোধ করতে ঐ অংশে অতিরিক্ত পুষ্টি পাঠানোর চেষ্টা করে। ফলে ফল, ফুল, পাতা বা কান্ড তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া হতে বঞ্চিত হয় এবং গাছটি দুর্বল হয়ে যায়। এই পরিস্থিতি হতে গছ বাঁচাতে গাছের শুকিয়ে যাওয়া বা মরা অংশ বা আধা শুকনো পাতা কেটে ফেলে দিতে হবে।
প্রাকৃতিক কীটনাশক তৈরি
🌷এই সময়ে গাছে পোকামাকড়ের উপদ্রব অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেড়ে যায়। কিছু কিছু পোকা রয়েছে যেগুলো গাছের পাতা ও কান্ড খেয়ে ফেলে। গরমে এমনিতেই গাছের প্রয়োজনীয় পুষ্টি ঘাটতি থাকে। আর তাতে পোকামাকড় পাতা কিংবা কান্ডে আঘাত করলে গাছের বৃদ্ধি ব্যহত হওয়ার পাশাপাশি গাছ মারাও যেতে পারে। এহেন ব্যার্থতা হতে রক্ষা করতে পোকামাকড়ের আক্রমণের আগেই ভেষজ চিকিৎসা বা প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যসম্মত কীটনাশক নিমের তেল তৈরি করে নির্দিষ্ট সময় পর পর তা গাছের কান্ড ও পাতায় ছিটিয়ে দিয়ে উপকার পাওয়া সম্ভব।
নিমের তেলের পাশাপাশি ১০ গ্রাম শুকনো মরিচের গুড়ো ১ লিটার পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে তা ছেঁকে উক্ত পানির সাথে সামান্য পরিমাণ গুড়ো সাবান মনে মিশিয়ে ফেনা করে রোদ থাকা অবস্থায় স্প্রে করলেও পোকামাকড় হতে নিষ্কৃতি পাওয়া সম্ভব।
রোদ হতে দুরে ছায়াযুক্ত স্থানে রাখা
🌱 টবে চাষ করা ফুল, ফল বা সবজি যেগুলোর পাতা তুলনামূলকভাবে একটুখানি বড় সেগুলোকে সম্ভব হলে ঘরের মধ্যে কিংবা ছায়ায় রাখতে হবে। প্রখর রোদ হতে দুরে ছায়া যুক্ত পরিবেশে রেখে এই রুক্ষ সময়টুকু পার করতে হবে। কারন বড় পাতাওয়ালা গাছের আর্দ্রতা ছোট পাতাযুক্ত গাছ হতে বেশি প্রয়োজন। তাই এসব গাছ বাহিরে না রাখাই শ্রেয়।
🌿 যেহেতু আবহাওয়া শুষ্ক এবং রোদের তাপ বেশি থাকে এবং পানি দেওয়ার সাথে সাথে তা চুষে ফেলে তাই মাটি গাছের গোড়ার মাটি কিছুটা শক্ত হয়ে যায়। শক্ত হয়ে যাওয়া মাটিতে স্বল্পমূলী গাছ, ফুল ও সবজির শেকড় বাড়তে অসুবিধা হয়। গাছের কান্ডের প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দিতে কয়েক দিন পর পর গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে। এতে মাটি দীর্ঘসময় পানি ধরে রাখতে সক্ষম হবে এবং শেকড়ও প্রয়োজনীয় আলো বাতাস পাবে। শেকড়ের বৃদ্ধি তরান্বিত হবে।
গাছে পানি দেওয়ার সঠিক নিয়ম
☘️ গরমে ছাদ বাগান বা টবে চাষ করা ফুল ও সবজির পানির চাহিদা পূরণে সকাল বিকাল দুবেলা করে পানি দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে কোনক্রমেই যেন গাছের গোড়ায় পানি জমে না যায়, গাছের গোড়ায় জমা পানিতে অনেকসময় গাছ মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেক্ষেত্রে, পানির ধারা সরাসরি গাছের গোড়ায় ন দিয়ে খানিকটা দুরে দেওয়াি শ্রেয়। এছাড়া, পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে পানির ধারা তীক্ষ্ণ না করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেওয়া উত্তম।
আগাছা পরগাছা পরিষ্কার
🌱 আগাছা জমির ক্ষতি করার পাশাপাশি নির্দষ্ট গাছ বা ফসলের বৃদ্ধি ব্যহত করে। কারণ, আগাছা দ্রুত বাড়ে এবং জমি বা বীজতলার বেশিরভাগ জৈব নিয়ে নেয়। আগাছার মূলোৎপাটনে গাছের বৃদ্ধি তরান্বিত হয়। অপরদিকে, পরগাছা যা কিছুটা বড়সড় গাছে বা গাছের কান্ড ও ডালে জন্মে। এগুলো সাধারণত মূল গছের কান্ড বা ডাল হতে তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগাড় করে নিজের বৃদ্ধি অব্যহত রাখে। একসময় মূল গছটিকে মেরে ফেলে।
চারা গাছের যত্ন
💐 বাগানে কিংবা টবে মিশ্র গাছ থাকলে ছোট চারাগাছের প্রতি অতিরিক্ত নজর ও যত্নশীল হতে হবে। ছারা বীজতলা হতে টবে বা লনে লাগানোর পূর্বে মাটির সাথে প্রয়োজনীয় ও পরিমানমত জৈবশক্তি বর্ধক প্রাকৃতিক সার, কোকো ডাস্ট ও ট্রাই কম্পোস্ট মিশিয়ে নিতে হবে। চারাগাছ মাটিতে লাগাতে হলে কমপক্ষে চারটি পাতাসহ বয়সের হতে হবে।
জৈব সার ব্যবহার
🎋অন্যদিকে, গাছের বৃদ্ধি তরান্বিত ও মাটির গুণাগুণ বাড়াতে ব্যবহার করতে পারেন প্রাকৃতিক ও জৈব সার। এগুলো মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মাটির হারিয়ে যাওয়া জৈবশক্তি ফিরিয়ে আনতে পারে। টবে মাটির পরিবর্তে কোকো পিট বা নারিকেলের ছোবড়া, ট্রাই কম্পোস্ট বা জৈব সার ব্যবহার করলে ছাদ বা বারান্দা বাগানের জন্য ভালো। এছাড়া, এগুলো ব্যবহার করলে টব কিংবা ছাদের ক্ষতি কমার পাশাপাশি টব স্থানান্তরে সুবিধা হয়। এছাড়া, বীজ বপনে অঙ্কুরোধগম শতভাগ হয়ে থাকে।
গরমের সবজি চাষ
🥗 সঠিক সময়ে ফলন বা ফল পেতে প্রয়োজন সময়ানুযায়ী বীজ বপন করা। গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ করার জন্য উপযুক্ত সময় বৈশাখ মাস। মৌসুমি সবজি চাষ করার ক্ষেত্রে এইসময় বরবটি, করলা, শসা, ক্যাপসিকাম, ডাঁটাশাক, কলমিশাক, ঢ্যাঁড়স, পুঁইশাক, পাটশাক, পুঁদিনা ও থানকুনি চাষ করা যেতে পারে। এছাাড়া, ভালো বীজ ভালো ফলনের চাবিকাঠি। তাই বীজ কেনার পূর্বে বীজগুলো সুস্থ্য, সবল ও পোকা মুক্ত কিনা দেখে নিতে হবে।
🎭 আজকাল, অনলাইনে গাছের বীজ ও চারা কিনতে পাওয়া যায়। সুস্থ্য, সবল ও নিরাপদ বীজ কিনতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।