ভালো খেজুর চেনার উপায়
খেজুর বিশ্বের সবথেকে মুখরোচক মিষ্টি ও পুষ্টিকর ভালোগুলোর মধ্যে একটি। সম্প্রতি খেজুর নিরামিষভোজী ও সচেতন মানুষের নিকট জনপ্রিয় খাবার হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। যারা প্রক্রিয়াজাত চিনি বা মিষ্টি গ্রহণে আনিচ্ছুক তাদের জন্য খেজুর একটি অন্যতম অবলম্বন যা চিনির প্রাকৃতিক পরিপূরক। বাজারে এই চাহিদাকে পুঁজি করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভেজাল ও মেয়াদ উত্তীর্ণ খেজুর বিক্রি করে থাকে। কৃত্রিম মিষ্টি বা পণ্য কোনো উপাদান মেশানো আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে হলে জানতে হবে ভালো খেজুর চেনার উপায়। বেশ কিছু দিক বিবেচনায় চেনা যায় বাজারে থাকা খেজুরের মধ্যে কোনটি ভালো এবং সতেজ। মনে রাখতে হবে খেজুর যেহেতু ভাল মানের মিষ্টির উৎস তাই একদল অসাধু ব্যবসায়ী যারা কৃত্রিম মিষ্টি মিশিয়ে সাধারণ ক্রেতাকে ধোঁকা দিয়ে থাকে। আসুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে ভাল খেজুর চিনতে পারব।
ভালো মানের খেজুর চেনার বেশ কিছু উপায় রয়েছে। তবে, মূলত সাধারণ তিনটি বিষয়ের উপর বিবেচনা করে নির্বাচন করা সম্ভব ভালো কিনা।
উপরিভাগ দেখে ভালো খেজুর চেনার উপায়
সতেজ ও তাজা খেজুরের চামড়া সাধারণত একটু কুঁচকানো হবে। তবে তা অবশ্যই শক্ত হবে না। এছাড়া, উপরের চামড়া এতটা নরমও হবে না। উপরের চামড়া হবে চকচকে এবং উজ্জল, কিছুটা স্বচ্ছভাব থাকবে। খেজুরের গায়ে কোনোভাবেই স্ফটিকযুক্ত চিনি বা দানাদার কিছুর উপস্থিতি থাকবে না। অন্যদিকে, খেজুরের বহিরাবরণে তেল বা পাউডার জাতীয় যে-কোনো কিছুর উপস্থিতি নিশ্চিত করবে ভেজাল বা মানহীন কিংবা নিম্নমানের খেজুর। যা আপনি চাচ্ছেন তা এটি নয়।
উৎপাদনের অঞ্চল দেখে ভালো খেজুর চেনার উপায়
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে খেজুরের উৎপাদন হয়ে থাকে। তাই বলে কি সব অঞ্চলের খেজুরের মান সমান? না, মোটেই থিক নয়। খেজুর মূলত মরু অঞ্চলে উৎপাদিত একটি ফল। মরু অঞ্চলের পাশাপাশি এখন নাতিশীতোষ্ণ দেশগুলোতেও খেজুরের চাষ হয়ে থাকে, তাই ভালো মানের খেজুর নির্বাচনে অবশ্যই আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে আপনি যা কিনতে চাচ্ছেন তা কোথায় বা কোন অঞ্চলের। উৎপাদনের দিক থেকে মিশর বিশ্বে প্রথম। এর পরপরই রয়েছে ইরান, সৌদি আরবের অবস্থান তৃতীয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থান হরহামেশায় বদলালেও চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমীরাত। এর পরে উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে পাকিস্তান, আলজেরিয়ায় ও আফগানিস্তান। সুতরাং আপনি যে খেজুর কিনতে চাচ্ছেন তা কোন অঞ্চলের তা দেখেই বুঝতে পারবেন কতটা ভালো খেজুর আপনি কিনতে যাচ্ছেন।
নাম বা জাতের উপর ভিত্তি করে ভালো খেজুর চেনার উপায়
সারা বিশ্বে প্রায় ৩০০০ রকমের বা জাতের খেজুর রয়েছে। এসব জাতের মধ্যে জনপ্রিয় খেজুরের নাম হলো আজুয়া, আনবারা, সাগি বা সুগায়ি, সাফাওয়ি, মুসকানি, মরিয়ম, খালাস, ওয়াসালি, বেরহি, শালাবি, ডেইরি, মাবরুম, ওয়ান্নাহ, সেফরি, সুক্কারি, খুদরি ইত্যাদি। খেজুরের নানা রকম জাত থাকলেও আমাদের দেশে আজওয়া ও মরিয়ম খেজুর জনপ্রিয় তাই চাহিদারও শীর্ষে।
ফল সংগ্রহের সময়ের উপর ভিত্তি করে ভালো খেজুর চেনার উপায়
গাছ থেকে ফল বা খেজুর সংগ্রহের বেশ কয়েকটি পর্যায় রয়েছে। এসব পর্যায়ের উপর ভিত্তি করেও খেজুরের মান নির্ণয় করা হয়ে থাকে। সাধারণত চারটি পর্যায়ে খেজুর পাকানো হয়। আরবি ভাষায় সেগুলো বিশ্বব্যাপী কিমরি খেজুর বা কাঁচা, খলাল খেজুর বা পূর্ণাঙ্গ, ক্রাঞ্চি, রুতাব খেজুর বা পাকা কিংবা নরম এবং তুমুর খেজুর বা পাকা কিংবা সূর্যে শুকানো নামে পরিচিত। এই চারতি ধাপের মধ্যে শেষ দুই ধাপের খেজুর হলো ভালো মানের।
মিষ্টির মাত্রা চেখে খেজুর যাচাই
ভালো কিংবা খারাপ বা নিম্ন মানের খেজুর কিনা তা যাচাই করার অন্য একটি উপায় হলো খেজুরে উপস্থিত মিষ্টির মাত্রা চেখে দেখা। খেজুরের প্রাকৃতিকভাবে থাকা মিষ্টি হবে সহনীয় পর্যায়ের। যারা অতিরিক্ত মিষ্টি খেতে পছন্দ করেন না তারাও খেতে পারে এমন মিষ্টি থাকে উন্নতমানের খেজুরে। মনে রাখবেন, খেজুর খাওয়ার সময় যদি তাতে কটু মিষ্ট লাগে বুঝতে হবে সেখানে কৃত্রিম কিছু দেওয়া হয়েছে।
পিঁপড়া ও মাছিদের আকর্ষন
খেজুর কেনার পর কিংবা কেনার সময় দোকানে খেজুরের বক্সে পিঁপড়া ও মাছির উপস্থিতি দেখে বুঝতে পারবেন খেজুরের মান কেমন। প্রাকৃতিকভাবে বিদ্যমান যে মিষ্টি খেজুরে থাকে তা কোনক্রমেই পিঁপড়াদের আকৃষ্ট করবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তাতে কৃত্রিম চিনি বা মিষ্টি মেশানো না হবে। অন্যদিকে, খেজুরে ভেজাল মিশ্রিত কিছু না থাকলে তা মৌমাছিরসহ অনেক পোকাকে আকৃষ্ট করবে।
খেজুরের ভেতর ও বাহিরে মিষ্টির মাত্রা
খেজুর এমন একটি ফল যা মুখে দিলেই একরকম মিষ্টির উপস্থিতি বুঝা যায়। অর্থাৎ এর চামড়াও মিষ্টি থাকে। কিন্ত ভেতরের ও বাহিরের মিষ্টি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারতম্যহীন হয়ে থাকে। তাই খেজুর মুখে নেওয়ার পর ও খাওয়ার সময়ের মিষ্টি কম বেশি হলে বুঝতে হবে সেখানে কৃত্রিম কিছু আছে।
সাধারণত, খেজুরের নাম, দাম ও উৎপাদনের অঞ্চলের উপর ভিত্তি করে ভিন্নতা থাকলেও প্রায় সকল খেজুরের পুষ্টিমানই সমান। শধুমাত্র মানের উপর ভিত্তি করে এর সামান্য কিছু পুষ্টিগুণের তারতম্য হয়ে থাকে।