যে ব্যবসায় লাখ টাকা মুনাফা
বর্তমানে চলমান সংকটে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেওয়ায় বহু বহুজতিক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মী ছাটাই করে। ফলে বহু চাকরিজীবিকে বরণ করে নিতে হয় বেকার জীবন। জীবিকার সন্ধানে হণ্যে হয়ে ঘোরা এরই একটি বড় অংশ আগ্রহী হচ্ছে ব্যবসায় যা সম্প্রতি জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। তবে ব্যবসা চাইলেই হুট করে শুরু যায় না, প্রয়োজন অভিজ্ঞতা ও পুঁজির। অভিজ্ঞতা ও পুঁজি ছাড়া যেমন বড় কোনো কারবার শুরু করা যায় না ঠিক তেমনই এমন কিছু ব্যবসা বা করবার রয়েছে যা শুরু করতে আপনার বড় পুঁজির দরকার নেই। এমনকি এইসব ব্যবসার জন্য অভিজ্ঞতারও প্রয়োজন না হয় না। উপরন্তু আপনি এই সকল ব্যবসা দিয়েই ভারি করতে পারেন আপনার ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতার ঝুড়ি।
এমন কিছু ব্যবসা রয়েছে যেখানে আপনি খুবই অল্প পুঁজি খাটিয়ে আয় করতে পারেন দৈনিক ৪-৫ হাজার টাকা। অর্থৎ আপনি মাসে ১ লক্ষ ২০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা উপর্জন করতে পারবেন সহজেই। এমন কতকগুলো ব্যবসা বা করবারের মধ্যে কাঁচা বা পাকা কলার চিপস্ তৈরির ব্যবসা একটি। এমন ব্যবসা শুরু করতে আপনাকে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না। বিশেষ করে যারা চাকরি ছেড়ে কিংবা ব্যবসায়ী হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী তাদের জন্য এই কলার চিপস তৈরি ব্যবসা পরিকল্পনা কিন্তু মন্দ নয়। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয় বরং উপকারী এবং কলার চিপস শিশু কিশোর বৃদ্ধ সকলেই পছন্দ। এছাড়া, আলুর চিপসের চেয়ে কলা চিপস বেশি জনপ্রিয় ও চাহিদা বেশি হওয়ায় এটির বিক্রিও প্রচুর।
পটেটো বা আলুর চিপস ব্যবসায় অনেক বড় বড় ব্র্যান্ড কাজ করে বিধায় সেখানে প্রতিযোগীতাও বেশি। অপরদিকে, কলার চিপস নিয়ে এখনও বড় বা বহুজাতিক কোনো প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসা শুরু করতে দেখা যায় নি বিধায় এখানে রয়েছে প্রচুর সম্ভাবনা। দেখে নেয় যাক কিভাবে শুরু করা যায় কাঁচা বা পাকা কলার চিপস তৈরির ব্যবসা।
সকলা ব্যবসা শুরুর জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু ধাপ। ঠিক তেমনই এখন আমরা যে ব্যবসা নিয়ে আলোচনা করব তা শুরু করতেও আপনাকে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। শুরুতেই যেটা দরকার তা হলো পরিকল্পনা। আপনাকে একটি ব্যবসায়িক প্লান বা পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। যার মধ্যে থাকবে আপনি কিভাবে কত টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করবেন। এর পাশাপাশি থাকতে হবে কেমন হবে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি। শুরুতেই কতজন কর্মী নিয়ে আপনি ব্যবসা শুরু করবেন। কোন বিপণন পদ্ধতিটি আপনি আপনার ব্যবসার প্রচার ও প্রসারে প্রয়োগ করবেন। সর্বশেষ কাঁচামাল কোথা থেকে সংগ্রহ করবেন ইত্যাদি।
মেশিনারিজ ও কাঁচামাল
কলার চিপস তৈরি করতে যে মেশিনারীজ প্রয়োজন তার মধ্যে অন্যতম হলো
- কলা পরিস্কার করার জন্য ওয়াশিং ট্যাংক
- পিলিং মেশিন
- কাটার মেশিন
- ক্র্যাম্ব ফ্রাইং মেশিন
- মশলা মিক্সিং মেশিন
- পাউচ প্রিন্টিং মেশিন
এছাড়া, কিছু পরীক্ষ-নিরীক্ষার জন্য কয়েকটি মেশিন। এই মেশিনগুলো অ্যামাজন বা আলিবাবা হতে সরাসরি কিনে নিতে পারেন। এছাড়া, বর্তমানে অনেক বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা এসব মেশিন আপনার চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করে দেবে। চাইলে, কোনো ইম্পোর্টার দিয়েও আপনি বাহির হতে আনতে পারেন। মেশিনগুলো ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় কিনতে পারবেন।
মেশিন স্থাপনের জন্য দরকার ১০০০ থেকে ১২০০ স্কয়ার ফুট জায়গা থাকতে হবে। যেহেতু অল্প বিনিয়োগ করব তই আপনি এই জায়গাটি চাইলে ভাড়া নিতে পারেন। বর্তমানে অনেক খালি জায়গা পাওয়া যায় ভাড়া হিসেবে।
কলার চিপস তৈরির প্রধান কাচামাল হলো কাঁচা কিংবা পাকা কলা। এর পাশাপাশি মশলাদি। এটি নির্ভর করবে আপনি কোন ফ্লেভারের মশলা দিতে চান তার উপর।
কলাঃ সাধারণত ১০০ কেজি চিপস তৈরি করতে প্রয়োজন ২০০ থেকে ২৫০ কেজি কলা। এই পরিমাণ কলার দাম পড়বে ১ থেকে দেড় হাজার টাকা। এদিকে, এই পরিমাণ কলার চিপস তৈরির জন্য প্রয়োজন হবে ২৫ থেকে ৩০ লিটার তেল। ১২০ টাকা দরে আপনার তেল খরচ হবে ৩৫০০ থেকে ৩৬০০ টাকা।
এই চিপস ভাজতে চিপস ফ্রায়ার মেশিনের জন্য ডিজেল দরকার হবে ২০ লিটার। একঘন্টার জন্য ডিজেল দরকার হয় ১০ লিটার। সে হিসেবে মেশিন চালানোয় ডিজেল খরচ লাগবে ১৫০০ টাকা।
মশলা মিক্সিং ও প্যাকিং করতে এই পরিমাণ চিপসের জন্য খরচ পড়বে ১০০০ টাকা। সুতরাং, ১০০০ কেজি চিপস তৈরিতে সর্বমোট খরচ হবে ৭৫০০ টাকা মাত্র। অর্থাৎ, প্রতি কেজিতে সর্বসাকুল্যে খরচ ৭৫ টাকা।
এখন বিক্রি বিষয়ে বলি, এক কেজি চিপস আপনি চাইলে মুদি দোকানে ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন।
মার্কেটিংঃ আপনি প্রতি কেজিতে ১০ টাকা লাভ হিসেবে দৈনিক ৪০০০ টাকা লাভে চিপস বিক্রি করলে মাসে ৪/৫ টি শুক্রবার বাদ দিয়ে ২৫ দিনে খুব সহজেই ১০০০০০/- আয় করতে পারবেন।